সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এক ঘোষণায় ‘২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেয়া সকল ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে। একই সঙ্গে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল বৈধ লাইসেন্স গ্রহীতার স্থায়ী ঠিকানার থানায় অথবা বর্তমান বসবাসের ঠিকানার নিকটস্থ থানায় লাইসেন্স গ্রহীতা নিজে বা মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়। এই নির্দেশনার পরও গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জমা হয়নি আরো ১৫ টি অস্ত্র।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪ টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে কক্সবাজার শহরের কাছাকাছি এলাকা পিএমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ'র গোলাবারুদ সহ অস্ত্র জমা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়ায় ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ।
ওই চিঠিতে যা বলা হয়েছে, আপনি ( মো. আব্দুল্লাহ) গত ১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হাজির হয়ে আপনার নামে ইস্যুকৃত শর্টগান যাহার নং-৬৩২৮১৭, মেইড ইন-তুর্কি এবং যাহার লাইসেন্স নং-০৮/২০১৬ এবং ৬০ রাউন্ড কার্তুজ সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জমা রাখার আবেদন করেন। তবে আপনার লাইসেন্স পর্যালোচনায় দেখা যায়, আপনার লাইসেন্স এর অনুকুলে ১০০ রাউন্ড কার্তুজ আপনার নামে ইস্যু আছে। কিন্তু আপনি গত ১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানার জিডি নং-৭০ মূলে ৬০ রাউন্ড কার্তুজ জমা রাখেন। অতিরিক্ত ৪০ রাউন্ড কার্তুজ বর্তমানে কোথায় আছে বা তাহা আপনি ব্যবহার করিলে কী কাজে ব্যবহার করিয়াছেন তাহার সঠিক তথ্য উপাত্ত বিস্তারিতভাবে জানানোর জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হইল। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাক্ষরিত ওই পত্রটি কক্সবাজার পুলিশ সুপারকেও অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, কক্সবাজারে ১৬ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্র- জনতার আন্দোলন দমাতে কক্সবাজার শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়া হয়। ইতিমধ্যে আলোকিত বাংলাদেশ এর প্রতিবেদকের হাতে কয়েকটি ভিডিও এসেছে। এর মধ্যে যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। অপর একটি ভিডিতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী মিছিল থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। ওই মিছিলের ভিডিওতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সামনে-পেছনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আরো কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হেলমেট পরিহিত কালো টি-শার্ট পরিহিত যুবক ভারি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী ও যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেনের অস্ত্রবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অস্ত্রবাজসহ আওয়ামী লীগ নেতারা আত্নগোপনে চলে যান। দীর্ঘ এক মাসের অধিক সময় পার হলেও একজন অস্ত্রবাজকে গ্রেফতার করতে না পারায় ছাত্র -জনতার মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে এই আন্দোলনে কক্সবাজার শহরের কাছাকাছি এলাকা পিএমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ'র নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তবে অভিযোগে অস্বীকার করে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, গত ৪ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার নামে যে ঘটনা বলা হচ্ছে সে সময় আমি উখিয়াতে আমার ব্যবসায়িক (ঠিকাদারী) কাজে ছিলাম। আমার সাথে অনেক লোকজন ছিল। আমার মোবাইল নেটওয়ার্ক ট্রেকিং করলেই বুঝা যাবে। আর আমার নামে যে লাইসেন্স করা সটগান ছিল সেটা বাড়িতেই ছিল আর সরকার থেকে ২০১৬ সালে নেওয়া ১০০ টি কার্তুজের মধ্যে ২০২১ সাল পযন্ত ৪০ টি কার্তুজ ব্যবহার হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে সরকারি হিসাবে আমার কাছে ৬০ টি কার্তুজ ছিল। সর্বশেষ সরকারের আদেশে ১ সেপ্টেম্বর শটগানের সাথে ৬০ টি কার্তুজই জমা দিয়েছি। তাহলে কিভাবে কখন গুলি চালালাম আর আমি কিভাবে ঘটনায় জড়িত হলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, কারো নামে বৈধভাবে অস্ত্র ইস্যু করা হয় সাথে গোলাবারুদও থাকে। যদি ওই গোলাবারুদ কোন কারণে ব্যবহার হলে সংশ্লিষ্ট থানায় বিস্তারিত উল্লেখ করে জিডি করতে হয়। এদিকে কক্সবাজার সদর মডেল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. আব্দুল্লাহ তাঁর বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে থানায় কোন জিডি করেনি।
যোগাযোগ করা হলে গতকাল বুধবার রাতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে যৌথ অভিযান শুরু হয়। বুধবার সন্ধ্যায় ১৪ টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১ টি শর্ট গান, ১টি পিস্তল, ৩ টি এলজি ও ৯ টি একনলা বন্দুক।
যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ ' চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ প্রসঙ্গে বলেন, বৈধ হলেও গোলাবারুদ ব্যবহারে একটি নিয়ম রয়েছে। কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। যৌথ বাহিনীকে সহযোগীতা করার আহবান জানান তিনি।